আমার এক রুমমেটকে দেখলাম খুব খুশি খুশি। তার প্রতিটি কাজেই আনন্দের ধারা বয়ে যায়। যখনই দেখি তার চোখ মুখে আনন্দের আভা জ্বলজ্বল করে। মাঝেমধ্যে দেখি শিষ বাজিয়ে গানও গায়। তাকে এর আগে কখনো এমন দেখিনি। তার আনন্দের কারন জিজ্ঞাসা করতেই সে বলল, “ভাই বাড়ি যাচ্ছি, তাই মনটা খুব উৎফুল্ল লাগছে।
নিজ গৃহে ফিরা আসলেই খুব আনন্দের। শুধু সে নয়, প্রত্যেক ব্যক্তিই নিজ গৃহ হতে বহুদিন বাহিরে থাকার পর, গৃহে ফেরার সময় আনন্দে আত্নহারা হয়ে যায়। আসলে মানুষ একই জায়গায় বসবাস করলে সে জায়গার প্রতি তার মায়া জন্মে যায়। তাই সে সেই মায়ার টানে গৃহে ফেরার জন্য উন্মাদ হয়ে থাকে। নিজ গৃহ ছেড়ে যদি সে রাজপ্রসাদেও থাকে তবুও তার মন পড়ে থাকে শীর্ণ গৃহের প্রতি। এ শুধু মানবজাতিই নয়, পক্ষীসমাজও সন্ধ্যার সময় আনন্দে আত্নহারা হয়ে কিচিরমিচির শব্দ করে নিজ গৃহে ফিরে যায়।
রুমমেটের ফ্লাইট ভোর রাত পাঁচটায়। কিন্তু বাড়ি যাবার উত্তেজনায় খাওয়া দাওয়া না করেই রাত দশটায় এয়ারপোর্ট এর উদ্দেশ্যে বের হয়ে পরল। রুমের সবার ডিউটি থাকায় তার সাথে কেউ এয়ারপোর্ট যেতে পারিনি।
দেশে পৌঁছেই আমাকে কল দিলেন রুমমেট। আমি একটি কাজে ব্যস্ত থাকায় ফোনটা কেটে দিলাম। তাকে বুঝাতে চেষ্টা করলাম একটু ব্যস্ত আছি। কিন্তু না সে আবারো কল দিল। এবার আমি রিসিভ না করে পারলাম না। রিসিভ করে বললাম, “ভাই একটু ব্যস্ত আছি, পরে কল ব্যাক করছি। কিন্তু সে আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই আনন্দচিত্তে বলে উঠল, ওমর ভাই বাসায় চলে আসছি। তার আনন্দিত কন্ঠ শুনে কথা না বলে পারলাম না। সে আবারো বলে উঠল, দেশে ধূলাবালি মিশ্রিত বাতাস গ্রহণ করেও আলাদা এক ভালোলাগা অনুভব করছি। আপনি জানেন এ যেন দেশ নয় আমার কাছে স্বর্গ মনে হচ্ছে।
তার কথায় মুগ্ধ হয়ে গেলাম। আমরা যে যেখানেই থাকি না কেন! মাতৃভূমিই আমাদের কাছে সেরা। সিঙ্গাপুরের এত সুন্দর একটি দেশ। যে দেশে প্রতিদিন রাস্তাঘাট ধোয়ামোছা করা হয়, যেখানে ঘন্টার পর ঘন্টা ট্রাফিক জ্যামে আটকা থাকতে হয় না, পরিবেশ দূষন নাই বললেই চলে। যেখানে ছিনতাইকারী, পকেটমার, ছিটকে চোর বা অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়তে হয় না। যেখানে লাখ লাখ টাকা নিয়ে প্রকাশ্যে হাটা যায়। এমন দারুন একটি দেশে থেকেও সবসময় দেশের জন্যই মন কাঁদে। এর কারন একটাই দেশের প্রতি আমাদের মায়া, ভালবাসা, আবেগ। ইমন ভাইয়ের (রুমমেটের নাম ইমন) আনন্দে আমিও আনন্দিত আর কথা না বাড়িয়ে রেখে দিলাম।
ওমর ফারুকী শিপন, সিঙ্গাপুর।