করোনায় জর্জরিত পুরো বিশ্ব। এই মহামারী যেন মানবসভ্যতার ইতিহাসের ভঙ্গুর স্বাস্থ্যখাতের দিকেই আঙুল তুলেছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এই যুগে রোবট যেখানে মানুষের দাস, ঠিক সেসময়েই এক ক্ষুদ্র ভাইরাস যেন প্রশ্ন তুললো মানবজাতির অস্তিত্ব নিয়ে। দুর্যোগকালীন এই সময়ে পুরো পৃথিবীর স্বাস্থ্যব্যবস্থাই যেন হার মেনেছে করোনার কাছে। তবুও অনেক রাষ্ট্রের মন্ত্রী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষেরাও নিজেদের সর্বোচ্চ সামর্থ্য দিয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন এই মহামারীকে ঠেকাতে। কিন্তু, করোনার ভয়াল থাবা থেকে বাদ যাননি খোদ স্বাস্থ্যমন্ত্রীরাও।
গত সোমবার (৬ জুলাই) করোনায় আক্রান্ত হিসেবে সনাক্ত হয়েছেন বলিভিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী মারিয়া ইদি রোকার। তবে তার অবস্থা স্থিতিশীল বলে নিশ্চিত করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে দেশটির অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট জিনিন আনেজ বলেন,
‘ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ অবিরাম চলবে এবং আমি প্রার্থনা করি বলিভিয়ানদের সুস্থ রাখার এই যুদ্ধে আবার আমাদের মন্ত্রী যোগ দেবেন।’
একইদিন (৬ জুলাই) পাকিস্তানের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাফর মির্জা নিজের করোনা আক্রান্তের তথ্য টুইটারে নিশ্চিত করেন।সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে জাফর মির্জা এ তথ্য জানিয়ে লিখেছেন,
আমি বর্তমানে নিজ বাসায় আইসোলেশনে আছি। সব ধরনের সতর্কতা নেয়া হয়েছে।
এর আগে ১৭ই জুন (বুধবার) দিল্লির স্বাস্থ্যমন্ত্রী সত্যেন্দর জৈনের কোভিড-১৯ টেস্ট পজিটিভ আসে বলে জানা যায়। যদিও প্রথম টেস্টে তার দেহে করোনার উপস্থিতি ধরা পড়েনি। তবে উপসর্গ থাকায় দ্বিতীয় বার টেস্ট করা হলে রেজাল্ট পজিটিভ আসে। জানা যায়, বুধবার সকালেই স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নমুনা টেস্ট করতে পাঠানো হয়েছিল। গায়ে জ্বর নিয়ে সোমবার (১৫ জুন) রাতে রাজীব গান্ধী সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে ভর্তি হন দিল্লির স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন জিম্বাবুয়ের স্বাস্থ্যমন্ত্রী চিতালু চিলুফিয়া। বুধবার (২৭ মে) করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হন এই মন্ত্রী। মন্ত্রী পরিষদ সচিব ডা. সিমন মিতি এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এর আগে মঙ্গলবার (২৬ মে) দেশটির তথ্যমন্ত্রী ডোরা সিলিয়া করোনায় আক্রান্ত হন। একদিনের মাথায় দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রীও করোনায় আক্রান্ত হন।
দক্ষিণ এশিয়ার আরেক দেশ আফগানিস্তানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গত ৮ মে (শুক্রবার) জানায়, দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী ফিরোজউদ্দিন ফিরোজের দেহে করোনার উপসর্গ দেখা দেওয়ায় তার করোনা পরিক্ষা করা হয়। পরীক্ষার ফলাফল পজিটিভ আসার পর চিকিৎসকদের পরামর্শে তাকে আইসোলেশনে রাখা হয়।
গত ২রা এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) ইসরাইলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, বুধবার (১লা এপ্রিল) রাতে করোনায় আক্রান্ত হন ৭১ বছর বয়সী স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও তার স্ত্রীর।এরপর থেকে তারা আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসা নিতে শুরু করেন।
করোনার মহামারী ঠেকাতে যথেষ্ট তৎপর যুক্তরাজ্য। গত মে মাসের ১০ তারিখ (মঙ্গলবার) জানা যায়, ব্রিটিশ স্বাস্থ্যমন্ত্রী নাদাইন ডরিস করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। ডরিস নিজেই এ তথ্য জানান। শরীরে করোনার উপস্থিতি পাওয়ার পর থেকে তিনি সব রকম নিয়ম মেনে চলেন এবং আইসোলেশনে থাকেন।
অন্যদিকে গত ২৫ শে ফেব্রুয়ারি (মঙ্গলবার) ইরানের ডেপুটি স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইরাজ হারিরচির শরীরে করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়। ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন উপদেষ্টা এ তথ্যের নিশ্চয়তা দেন।
তবে জুন মাসের ১৫ তারিখ পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে বিদায় নেন বাংলাদেশের সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। গত ২ জুন তিনি করোনায় আক্রান্ত হলেও পরবর্তীতে তাঁর দেহে করোনার উপস্থিতি পাওয়া যায়নি।
করোনার প্রভাবে আচ্ছাদিত এই বিশ্ব যেন স্বাস্থ্যখাতের লড়াকু মনোভাবের কথাই তুলে ধরছে বার বার। কোনো কার্যকরী ভ্যাকসিন কিংবা ওষুধ আবিষ্কৃত না হওয়া পর্যন্ত হয়তো এভাবেই টিকে থাকার লড়াই সম্বলিতভাবে চালিয়ে যেতে হবে পুরো পৃথিবীকে।