মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫

সবশেষ

আমার ফয়সাল পাস করছে, এ রেজাল্ট দিয়া আমি কী করমু?

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ ফয়সাল সরকারের বৃদ্ধা মা হাজেরা বেগম বলেন, ‘এইচএসসির রেজাল্ট দিয়া কী করুমু, আমার সোনার মানিক চানই তো নাই, তোমরা যদি পারো আমার ফয়সাল কই শুয়ে আছে বলো, আমি আমার সোনার মানিকরে দেখতে যামু।’

জানা যায়, মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) প্রকাশিত এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৪.৩৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন ফয়সাল সরকার। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ফয়সালের দুলাভাই মো. আবদুর রহিম। তার বাড়ি কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার কাচিসাইর গ্রামে।

জানা যায়, সংসারের অভাব ঘুচাতে শ্যামলী পরিবহনের একটি বাসে সুপারভাইজার হিসেবে কাজ করত ফয়সাল। বাবা-মা, ভাইসহ পরিবার নিয়ে থাকত আবদুল্লাহপুর এলাকায় একটি ভাড়া বাসায়। ফয়সাল ঢাকার দক্ষিণখান এস এম মোজাম্মেল হক টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে পরীক্ষা দিয়েছিলেন। তার উত্তীর্ণের খবরে উচ্ছ্বাসের বদলে বিষাদের ছায়া নেমে এসেছে পরিবার, সহপাঠী ও স্বজনদের মধ্যে।

গত ১৯ জুলাই বিকেলে আবদুল্লাহপুরের শ্যামলী পরিবহনের কাউন্টারে যাবেন বলে বাসা থেকে বের হয় ফয়সাল। সন্ধ্যার পর তার নম্বরে ফোন করলে নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। এরপর বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে ২৮ জুলাই দক্ষিণখান থানায় জিডি করা হয়। এরপর কেটে যায় ১২ দিন। এই দিনগুলোতে ঢাকার সবগুলো হাসপাতালে খোঁজাখুঁজি করেও তার সন্ধান পাওয়া যায়নি। পরে ১ আগস্ট বিকেলে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামে খোঁজ নিলে তারা বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা মরদেহগুলোর ছবি দেখালে সেখানে ফয়সাল মরদেহ শনাক্ত করে স্বজনরা। তবে কোথায় দাফন করা হয়েছে বলতে পারেনি। শুধু এতটুকু জানা গেছে, ১৫-২০টি লাশ একবারে গণকবর দেওয়া হয়েছে, কাকে কোথায় দাফন করা হয়েছে তা কেউ জানেন না।

ফয়সালের দুলাভাই আবদুর রহমান বলেন, ‘পরীক্ষায় পাসের খবরে কলিজা ফেটে যাচ্ছে। ফয়সাল আন্দোলনে শহীদ হয়েছে প্রায় তিন মাস আগে। এখন তার পরীক্ষার ফলাফল হয়েছে, সে পাস করেছে। তার বাবা খুব অসুস্থ, কানে কম শোনে; শুধু মানুষের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। ফয়সাল পাস করেছে শুনে চোখের পানি ফেলছে আর কারও কাছে কিছু বলছে না।’

ফয়সালের বৃদ্ধা মা হাজেরা বেগম বলেন, আমার পোলা কতদিন আমারে মা কইয়া ডাক দেয় না, আমার বুক ফেটে যাচ্ছে। আমার ফয়সাল পাস করছে, এই রেজাল্ট দিয়া আমি কী করমু।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *