গত ঈদুল ফিতরের আগে প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাঠানো রেমিট্যান্সে দেখা গেছে রেকর্ড পরিমাণ প্রবাহ। চলতি বছরের মার্চ মাসে ব্যাংকিং চ্যানেলে এসেছে ৩২৯ কোটি মার্কিন ডলার, যা দেশের ইতিহাসে এক মাসের হিসাবে সর্বোচ্চ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ পরিসংখ্যান বলছে, মার্চ মাসের প্রথম ২৪ দিনেই এসেছিল ২৭০ কোটি ডলার। মাস শেষে এই অঙ্ক দাঁড়ায় ৩২৯ কোটিতে। আগের বছরের মার্চে এসেছিল মাত্র ১৯৯ কোটি ডলার— অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে প্রবাসী আয় বেড়েছে ৬৪ শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতেও এসেছিল ২৫২ কোটি ডলার।
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর প্রথম ঈদে এই রেকর্ড
প্রসঙ্গত, গত বছরের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এটি ছিল প্রথম ঈদ। সেই পরিপ্রেক্ষিতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক পরিবেশে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে বলে মনে করছেন ব্যাংকাররা। তাঁদের মতে, অর্থ পাচার কমে যাওয়ায় প্রবাসীরা বৈধ পথে টাকা পাঠাচ্ছেন, যার প্রভাবেই এমন রেকর্ড গড়েছে রেমিট্যান্স প্রবাহ।
ডলারের সংকট কমেছে, মূল্যও নিয়ন্ত্রণে
প্রবাসী আয় বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকিং খাতে ডলারের সংকট অনেকটাই কমে এসেছে। ব্যাংকারদের ভাষ্য, আগে যেখানে প্রতিযোগিতা করে ডলার কেনার হিড়িক ছিল, এখন তা নেই। বর্তমানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত সীমা ১২৩ টাকার মধ্যেই ডলার কেনাবেচা হচ্ছে, যা আগে একসময় ১২৮ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। এই স্থিতিশীলতায় আমদানি ব্যয়ও কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। বিশেষ করে খাদ্যপণ্যের দামে বড় ধরনের পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না।
রেমিট্যান্স: দেশের ডলারের রিজার্ভের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উৎস
প্রবাসী আয় দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এর বিপরীতে কোনো বৈদেশিক ব্যয় বা দায় নেই। রপ্তানি আয় বা বৈদেশিক ঋণের বিপরীতে ডলার এলে যেমন কাঁচামাল আমদানি বা ঋণ পরিশোধ করতে হয়, রেমিট্যান্স সে তুলনায় পুরোপুরি “দায়মুক্ত” আয়। ফলে রেমিট্যান্স বাড়লে সরাসরি দেশের মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি পায়, যা অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য বড় আশ্বাস।
প্রবৃদ্ধির ধারা ও বার্ষিক চিত্র
২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-মার্চ) প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছেন ২ হাজার ১৭৭ কোটি ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ২৮ শতাংশ বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে এসেছিল ১ হাজার ৭০৭ কোটি ডলার। গত ৬৯ মাসের তথ্য ঘেঁটে দেখা গেছে, চলতি মার্চেই সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছে। এর আগে সর্বোচ্চ ছিল ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে— ২৬৩ কোটি ডলার। ২০১৯-২০ অর্থবছরের পর মাত্র ২৪ মাসেই প্রতি মাসে ২০০ কোটি ডলারের বেশি আসছে।
ঈদ মানেই রেমিট্যান্সের বাড়তি ঢল
ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার আগে সাধারণত প্রবাসী আয় বাড়ে। কিন্তু এবারের ঈদে সেই প্রবাহ সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য নিঃসন্দেহে একটি স্বস্তির বার্তা।