মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সর্বোচ্চ সাজা প্রত্যাশা করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। আজ বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) মামলার রায়ের তারিখ ঘোষণার পর তিনি এই আশাব্যক্ত করেন।
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ‘দীর্ঘ পরিক্রমার পর মামলাটি রায়ের জন্য প্রস্তুত হয়েছে। সহকর্মীরা অনেক পরিশ্রম করেছেন। বিচার প্রক্রিয়ার সহযোগিতা করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে আমি গভীর কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধা জানাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা অঙ্গীকার করেছি, অপরাধী যতই শক্তিশালী হোক না কেন, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। আইন অনুযায়ী তাদের প্রাপ্য বিচার নিশ্চিত করা হবে। এই মামলা রায়ের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। আশা করি, আগামী ১৭ নভেম্বর আদালত সুবিচারে প্রজ্ঞার প্রয়োগ করবেন।’
চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম দেশের জনগণকে আশ্বাস দেন, ‘জাতির বিচারের প্রতি যে আকাঙ্খা ও তৃষ্ণা রয়েছে, আদালত তা পূরণ করবেন। একটি সঠিক রায়ের মাধ্যমে বাংলাদেশে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অবসান ঘটানো সম্ভব হবে। শেখ হাসিনার সর্বোচ্চ সাজা প্রদানের সম্ভাবনা রয়েছে এবং ভবিষ্যতের জন্য এটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।’
মামলার রায়ের তারিখ ঘোষণা করেন ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদার। প্যানেলের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
মামলার অপর দুই আসামি হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। মামলায় গ্রেপ্তার প্রাপ্ত একমাত্র আসামি সাবেক আইজিপি মামুন, যিনি রাজসাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রথম মামলা হিসেবে শুরু হয়। ১৭ অক্টোবর পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে প্রথম বিচার কার্যক্রম শুরু হয় এবং সেদিনই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
চলতি বছরের ১ জুন তিন আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়। অভিযোগে পাঁচটি ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে গণভবনে উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান, হেলিকপ্টার ও ড্রোন ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের লক্ষ্যবস্তুতে আক্রমণের নির্দেশ, রংপুরে ছাত্রকে হত্যা, রাজধানীতে ছয় আন্দোলনকারীকে হত্যা এবং আশুলিয়ায় ছয়জনকে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগ।
মামলায় যুক্তিতর্ক শুরু হয় ১২ অক্টোবর এবং শেষ হয় ২৩ অক্টোবর। চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম এই মামলায় শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের মৃত্যুদণ্ড দাবি করেছেন। আসামিদের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী খালাসের আবেদন করেছেন।








