সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫

মালয়েশিয়ার প্রবাসীদের কান্না পৌঁছাল জাতিসংঘে; দিল কড়া সতর্কবার্তা

মালয়েশিয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিকদের শোষণ, প্রতারণা এবং চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। নিয়োগ দুর্নীতি, অস্বচ্ছ সিন্ডিকেটের আধিপত্য ও অতিরিক্ত ফি আদায়ের মতো দীর্ঘদিনের সমস্যা মোকাবিলায় নতুন করে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছে সংস্থাটি।

জেনেভায় ২১ নভেম্বর প্রকাশিত এক বিবৃতিতে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা বলেন, মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের শোষণ ‌‘উদ্বেগজনকভাবে অব্যাহত’ রয়েছে। মিথ্যা প্রতিশ্রুতি, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়ম, পাসপোর্ট আটকে রাখা, চাকরির শর্তে অসঙ্গতি। সব মিলিয়ে বহু শ্রমিক গভীর ঋণ-দাসত্বের ফাঁদে পড়ে যাচ্ছেন।

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ওভারসিজ অ্যামপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস (বোয়েস) মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত হাজারো শ্রমিক সরকারি ফি-এর পাঁচ গুণের বেশি অর্থ পরিশোধ করেছেন। কারও কারও মালয়েশিয়া যাত্রা থমকে গেছে, অন্যদিকে যারা পৌঁছেছেন, তারা শোষণ ও অনিশ্চয়তার ঝুঁকিতে রয়েছেন।

অনেকেই অভিযোগ করেছেন, জোরপূর্বক বাড়তি অর্থ আদায়, সম্মতি ছাড়া অন্য কাজে পাঠানো এবং প্রতিশ্রুত চাকরির সঙ্গে বাস্তবতার বড় ধরনের অসামঞ্জস্যের কথা।

জাতিসংঘের তথ্যে আরও উঠে এসেছে, মাত্র কয়েকটি নিয়োগ এজেন্সি দুর্নীতি ও অস্বচ্ছতার ঘেরাটোপে বহু বছর ধরে একটি বন্ধ সিন্ডিকেট হিসেবে কাজ করছে। যাত্রার ঠিক আগে অনেক শ্রমিককে মিথ্যা ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করানো বা ভিডিও রেকর্ড করিয়ে নেওয়ার ঘটনাও তুলে ধরেছেন বিশেষজ্ঞরা। যেখানে দেখানো হয় শ্রমিকরা না কি কেবল সরকারি অনুমোদিত ফি-ই দিয়েছেন।

জাতিসংঘ দুই দেশের সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছে, নিয়োগ এজেন্সিগুলোর ওপর কঠোর নজরদারি, কেন্দ্রীভূত চাকরি-পোর্টাল চালু, শ্রমিকদের কাছ থেকে নিয়োগ ফি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধকরণ এবং শোষণমূলক নেটওয়ার্ক ধ্বংসে কার্যকর দ্বিপাক্ষিক পদক্ষেপ এখন সময়ের দাবি।

সংস্থাটি মালয়েশিয়া সরকারকে শ্রমিকদের ইচ্ছাকৃত আটক, হয়রানি বা ডিপোর্টেশনের ঝুঁকি থেকে সুরক্ষা দিতে আরও শক্তিশালী ব্যবস্থা নিতে আহ্বান জানায়। তারা স্পষ্টভাবে জানায়, অভিবাসী শ্রমিকদের অপরাধী হিসেবে বিবেচনা করা বা পুনরায় ভুক্তভোগীতে পরিণত করা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন।

জাতিসংঘ দ্রুত স্বাধীন তদন্ত, ক্ষতিপূরণ, ঋণমুক্তি এবং ঝুঁকিপূর্ণ খাতে শ্রম পরিদর্শন বাড়ানোর পাশাপাশি শ্রম অধিকার সংস্থা ও ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের মধ্যে কার্যকর ‘ফায়ারওয়াল’ তৈরির পরামর্শ দিয়েছে। এছাড়া শ্রমিকদের জন্য প্রাক-প্রস্থান প্রশিক্ষণ জোরদারের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।

জাতিসংঘ জানিয়েছে, বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া সরকারের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ এরই মধ্যে চলছে এবং তারা গঠনমূলক সংলাপ বজায় রাখতে প্রস্তুত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *