বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৫

গৃহকর্মী নিয়োগের আগে যে ১০টি বিষয় যাচাই করুন

আজকাল গৃহকর্মী ছাড়া অনেক পরিবারের চলমান জীবন কল্পনাই করা যায় না। তবে একই সঙ্গে খবরের পড়তে পড়তে মনটা কেঁপে ওঠে— চুরি, প্রতারণা, এমনকি খুনের ঘটনায়!

গত সোমবার ঢাকার মোহাম্মদপুরের এক বাসায় ৪৮ বছর বয়সী লায়লা আফরোজ এবং তার ১৫ বছর বয়সী মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজকে গলা কেটে খুন করা হয়।

তাই নিয়োগের আগে কিছু বাড়তি সতর্কতা নিলে নিজের পরিবারকে অনেক বড় বিপদ থেকে রক্ষা করা সম্ভব।

ঢাকার মোহাম্মদপুর এফ ব্লক ৯শ’ ফ্ল্যাট মালিক কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী জালাল উদ্দিন শেখ জানালেন বিস্তারিত।

পরিচয়পত্র ও ছবি যাচাই করুন: জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্ম সনদ, সদ্য তোলা দুতিনটি রঙিন ছবি এবং দুজন শনাক্তকারীর নাম-ঠিকানা-মোবাইল নম্বর নিয়ে নিন। এই কাগজপত্রের ফটোকপি নিকটস্থ থানায় জমা দিন এবং নিজের কাছেও রাখুন।

পুলিশ জানিয়েছে, এই সাধারণ কাজটি করলে অপরাধী শনাক্ত করতে অনেক সহজ হয়।

পূর্বের কর্মস্থলের তথ্য নিন

‘আগে কোথায় কাজ করতেন? কেন ছেড়েছেন?’— এই দুই প্রশ্নের উত্তর শুনে থেমে যাবেন না।

পূর্বের বাড়ির মালিকের সঙ্গে প্রয়োজনে ফোনে কথা বলুন। অনেকে লজ্জায় খারাপ কথা বলতে চান না, তাই সরাসরি জিজ্ঞাসা করুন— ‘আপনার কোনো জিনিস হারিয়েছে কি? তার আচরণ কেমন ছিল?’

গ্রামের বাড়ি যাচাই করুন

স্থায়ী ঠিকানা, বাবা-মা-ভাইবোনের নাম-মোবাইল, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বা মেম্বারের নম্বর নিন। সম্ভব হলে ওই এলাকার কোনো পরিচিত মানুষের মাধ্যমে খোঁজ নিন। অনেক অপরাধী ভুয়া ঠিকানা দিয়ে থাকেন।

বিশ্বস্ত এজেন্সি বা পরিচিতির মাধ্যমে নিন

রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা অচেনা লোককে ঘরে তোলার চেয়ে লাইসেন্সধারী এজেন্সি বা বন্ধু-পরিবার-প্রতিবেশীর রেফারেন্স অনেক নিরাপদ। এজেন্সি নিলে তাদের পূর্বের গ্রাহকদের রিভিউ দেখে নিন।

সিসি ক্যামেরা বসান

প্রধান দরজা, বরাবর অন্তত একটি ক্যামেরা থাকলে অপরিচিত কেউ এলে ধরা পড়ে। লিভিং ও রান্না ঘরেও ক্যামেরা রাখা যায়। এতে নিজের অনুপস্থিতিতেও সব নজরে থাকে।

মূল্যবান জিনিস লুকিয়ে রাখুন

স্বর্ণ, নগদ টাকা, গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র লকারে রাখুন। লকারের চাবি কখনও গৃহকর্মীর হাতে দেবেন না। যে ঘরে লকার আছে সে ঘর আলাদা তালা দিয়ে বন্ধ রাখুন।

মানসিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করুন

প্রথম কয়েকদিন ভালো করে লক্ষ্য করুন— অযথা উত্তেজিত হচ্ছে কি-না, মোবাইলে গোপনে কথা বলছেন কি-না, রাতে বাইরে যাচ্ছেন কি-না। কোনো অস্বাভাবিক আচরণ দেখলে দেরি না করে ব্যবস্থা নিন।

লিখিত চুক্তি করুন

কাজের সময়, বেতন, ছুটি, মোবাইল ব্যবহার, বাইরে যাওয়া-আসা— সবকিছু কাগজে লিখে দুজনের সই নিন। এবং দুজনের কাছে একটি করে কপি রাখুন।

প্রতিবেশীদের জানিয়ে রাখুন

যে ব্যক্তিকে নিয়োগ দিচ্ছেন তার নাম-ছবি পাশের ফ্ল্যাট বা বাড়ির লোকজনকে দেখিয়ে দিন। কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটলে তারা সাহায্য করতে পারবেন।

প্রবেশাধিকার সীমিত করুন

প্রথম কয়েক মাস শোবার ঘর, স্টাডি রুম বা লকারের ঘরে ঢুকতে দেবেন না। ধীরে ধীরে বিশ্বাস অর্জন হলে তবেই ছাড় দিন।

নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সাধারণ সতর্কতাগুলো মানলে ৯০ শতাংশ ঝুঁকি কমে যায়। নিরাপত্তার ব্যাপারে একটু বাড়তি পরিশ্রম পরিবারকে বড় বিপদ থেকে বাঁচাতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *