আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটানো জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের স্বীকৃতি ও তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ তিন দাবিতে রাজধানীর শাহবাগে সড়ক অবরোধ করেছেন আন্দোলনে আহতরা।
সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে গণঅভ্যুত্থানে আহত ও শহীদ পরিবারের ব্যানারে অবস্থান কর্মসূচি শুরু হয়। এতে শাহবাগ মোড়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সৃষ্টি হয় যানজটের।
বিক্ষোভকারীদের দাবিগুলো হলো-দুই ক্যাটাগরিতে আহতদের স্বীকৃতি দেওয়া, তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং আহতদের জন্য হটলাইন নম্বর চালু করা।
আহত ব্যক্তিদের সুরক্ষায় আইন করারও দাবি জানাচ্ছেন তারা। এর আগে গত ২ ফেব্রুয়ারি বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহতদের আন্দোলনের মুখে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান বলেছিলেন, আহতদের প্রতি সরকারের আন্তরিকতার কোনও ঘাটতি নেই এবং সরকার দায়িত্ব এড়াচ্ছে না।
সেদিন তিনি বলেন, “আমরা স্পষ্ট করতে চাই যে, আহতদের যথাযথ চিকিৎসার ব্যাপারে আমাদের পক্ষ থেকে আন্তরিকতার কোন ঘাটতি নেই। আহতদের সুচিকিৎসা দেওয়া আমাদের নৈতিক দায়িত্ব বলে মনে করি। এছাড়া, তাদের মানসিক কষ্ট এবং যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে সেখানে আমরা মনোযোগ দিয়েছি এবং দিচ্ছি।”
কিছুদিন আগেই সরকার জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ও নিহতদের পরিচয় কী হবে তা নিশ্চিত করে। সে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, জুলাই অভ্যুত্থানে নিহতরা ‘জুলাই শহীদ’ নামে এবং আহতরা ‘জুলাই যোদ্ধা’ নামে পরিচিত হবেন বলে জানানো হয়। সে অনুযায়ী তারা পরিচয়পত্রও পাবেন। যা প্রদর্শন করে পাওয়া যাবে বিভিন্ন সুবিধা।
প্রতিটি নিহতের পরিবার এককালীন ৩০ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা পাবে। এর মধ্যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জাতীয় সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে ১০ লাখ টাকা এবং আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জুলাইয়ে জাতীয় সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে ২০ লাখ টাকা সহায়তা দেওয়া হবে।
এর পাশাপাশি নিহতদের প্রতিটি পরিবারকে প্রতিমাসে ২০ হাজার টাকা করে ভাতা দেওয়া হবে। নিহতদের পরিবারের কর্মক্ষম সদস্যরা সরকারি ও আধাসরকারি চাকরিতে অগ্রাধিকার পাবেন।
‘জুলাই যোদ্ধা’রা তিনটি মেডিকেল ক্যাটাগরি অনুযায়ী সুবিধা পাবেন।
স্বাস্ধ্য অধিদপ্তরও আহতদের চিকিৎসায় তিনটি ক্যাটাগরি করেছে।
‘এ’ ক্যাটাগরিতে রয়েছে যারা অতি গুরুতর আহত, যাদের আজীবন সাহায্যের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। অর্থাৎ যাদের অন্তত এক চোখ বা হাত বা পা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যারা স্বাধীনভাবে জীবনযাপনের অনুপযোগী, সম্পূর্ণ দৃষ্টিহীন, সম্পূর্ণভাবে মানসিক বিকারগ্রস্ত এবং কাজ করতে অক্ষম বা অনুরূপভাবে আহত হয়েছেন।
‘বি’ ক্যাটাগরিতে রয়েছে গুরুতর আহত- যাদের দীর্ঘদিন সাহায্য দিতে হবে। অর্থাৎ যারা আংশিক দৃষ্টিহীন, মস্তিষ্কে গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত বা অনুরূপ আহত ব্যক্তি।
এরপর ‘সি’ ক্যাটাগরিতে রয়েছে আহত যারা এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তবে চিকিৎসা শেষে স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে সক্ষম হবেন। এই ক্যাটাগরিতে রয়েছে শ্রবণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত, গুলিতে আহত বা অনুরূপ আহত ব্যক্তি। আহত যারা এরই মধ্যে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ত্যাগ করেছেন এবং স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে সক্ষম তারা।
মন্ত্রণালয় এর আগে জানিয়েছিল, গুরুতর আহতরা (এ ক্যাটাগরি) এককালীন ৫ লাখ টাকা এবং প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা করে ভাতা পাবেন। আর যাদের এক অঙ্গহানি (বি ক্যাটাগরি) হয়েছে, তারা এককালীন ৩ লাখ টাকা এবং ১৫ হাজার টাকা করে মাসিক ভাতা পাবেন।
যারা সি ক্যাটাগরিতে আছেন তাদের জন্য আর্থিক সহায়তা নেই। তবে তাদের পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থানে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
এখন পর্যন্ত জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ৮৩৪ জন নিহতের তালিকা গেজেট আকারে প্রকাশ করেছে সরকার। এছাড়া আহতদের তালিকাও তৈরি করা হয়েছে, যা শিগগিরই গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে।