চোখে পানি, বুকভরা হাহাকার নিয়ে আকাশপথে ছুটে এলেন এক বাবা, শুধু শেষবারের মতো মেয়ের মুখ দেখবেন বলে। দক্ষিণ আফ্রিকাপ্রবাসী ওসমান গণির (৩৫) তিন বছরের একমাত্র কন্যা আরওয়া আক্তার বৃহস্পতিবার বিকেলে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের আলকরা ইউনিয়নের লক্ষীপুর গ্রামে পুকুরে ডুবে মারা যায়। মৃত্যুসংবাদ শুনেই বিমানের টিকিট কাটেন ওসমান গণি। শুক্রবার সকালে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে দেশে পৌঁছে হেলিকপ্টারে করে ছুটে আসেন গ্রামে, মেয়েকে শেষবারের মতো কোলে নিতে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার দুপুরে আরওয়া দাদার পিছু পিছু বাড়ির বাইরে বের হয়। দাদা শফিকুর রহমান তাকে ঘরে ফিরে যেতে বলেন এবং নিজ কাজে চলে যান। কিছুক্ষণ পর বাড়িতে ফিরে নাতনিকে দেখতে না পেয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু হয়। পরিবারের সবাই মিলে খুঁজতে খুঁজতে হঠাৎ বাড়ির পাশের পুকুরে ভেসে ওঠে ছোট্ট আরওয়ার নিথর দেহ।
মর্মান্তিক এ খবর পৌঁছে দেওয়া হয় দক্ষিণ আফ্রিকায় থাকা ওসমান গণিকে। দূর দেশে থেকেও তিনি সিদ্ধান্ত নেন, মেয়ের জানাজা ও দাফনে নিজে উপস্থিত থাকবেন। পরিবারের অনুরোধে শিশুটির মরদেহ রাখা হয় ফ্রিজিং ভ্যানে।
আজ (শুক্রবার) সকালে ওসমান গণি ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। সময় বাঁচাতে তিনি সড়কপথ বাদ দিয়ে হেলিকপ্টারে করে সকাল পৌনে ১০টার দিকে গুণবতী ডিগ্রি কলেজ মাঠে নামেন। সেখান থেকে সরাসরি বাড়িতে গিয়ে মেয়ের নিথর দেহ দেখেই ভেঙে পড়েন কান্নায়।
বেলা ১১টায় জানাজা শেষে আরওয়ার লাশ দাফন করা হয় পারিবারিক কবরস্থানে।
চোখে অশ্রু, কণ্ঠে হাহাকার নিয়ে ওসমান গণি বলেন,
“আমি আট মাস আগে ছুটি শেষে দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়েছিলাম। গতকাল বিকেলে ফোনে শুনি আমার মেয়ে পানিতে পড়ে মারা গেছে। বুকটা যেন ফেটে গেল। মেয়েটা আমার সঙ্গে ভাঙা ভাঙা কথায় গল্প করত; সে আর নেই, এটা বিশ্বাসই হচ্ছে না। একমাত্র সন্তানকে শেষবার দেখতে না পারলে নিজেকে ক্ষমা করতে পারতাম না।”








