বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের একটি মন্তব্য নিয়ে সম্প্রতি দেশের রাজনীতিতে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মামলা প্রত্যাহারের কথা বলেছেন—এমন অভিযোগ ওঠার পর তিনি নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। তার দাবি, সারাদেশের নয়, বরং নিজ এলাকার একটি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ‘প্রতিহিংসামূলক’ মামলা হলে তা প্রত্যাহারের কথা বলেছেন তিনি।
তবে এই ব্যাখ্যা দেওয়ার পরও সমালোচনা পুরোপুরি থামেনি। এমন পরিস্থিতিতে গত মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) মধ্যরাতে নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে সমালোচনাকারীদের ইঙ্গিত করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কড়া ভাষায় জবাব দিয়েছেন।
সমালোচনার জবাবে মির্জা ফখরুল তার পোস্টে লেখেন, কথা নিয়ে অনেক রাজনীতি করা যায়, ফ্যাসিজমের সামনে দাঁড়িয়ে জেলে যেতে পারে না সবাই!
পোস্টটিতে তিনি তার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের কঠিন দিকগুলো তুলে ধরেন। তিনি জেলজীবনের স্মৃতি, নিজের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া শতাধিক মামলা এবং দলের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে লাখ লাখ মামলার কথা উল্লেখ করেছেন। একইসঙ্গে কারাগারের ভেতরে ও বাইরে নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতনের চিত্রও তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।
জেলজীবনের স্মৃতিচারণ করে তিনি হাতের কারুকাজ করা একটি ব্যাগের ছবি শেয়ার করেন। তিনি লেখেন, ‘আমার মেয়ে যখন আমার সাথে দেখা করতে এসেছিল, ঢাকা জেলে। এই ব্যাগটা আমি ওকে দিয়েছিলাম। ব্যাগটা জেলের ভিতরে এক বন্দী বানিয়েছিল তার কাছ থেকে কিনেছিলাম।’
আওয়ামী লীগ আমলের চিত্র তুলে ধরে মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন যে, গত ১৫ বছরে লাখ লাখ কর্মী মিথ্যা মামলায় কারাবন্দী হয়েছেন। তিনি নিজের বিরুদ্ধেও ময়লার গাড়ি পোড়ানো থেকে শুরু করে হত্যা মামলাসহ ১১০টির বেশি মিথ্যা মামলার আসামি হওয়ার কথা জানান এবং প্রায় আড়াই বছরের বেশি জেলে থাকার অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন। তিনি অভিযোগ করেন, ‘আমাদের বলা হয়েছে, নির্বাচনে আসুন, মুক্তি পাবেন। আমরা প্রহসনের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করিনি। ৭ বার জামিন রিজেক্টেড হয়েছে।’
একটি ব্যক্তিগত ঘটনার বর্ণনাও দিয়েছেন মির্জুল—হাতের কারুকাজ সম্বলিত একটি ব্যাগের ছবিসহ তিনি বলেন, ‘আমার মেয়ে যখন আমার সাথে দেখা করতে এসেছিল, ঢাকা জেলে। এই ব্যাগটা আমি ওকে দিয়েছিলাম। ব্যাগটা জেলের ভিতরে এক বন্দী বানিয়েছিল তার কাছ থেকে কিনেছিলাম। জানিনা, কাউকে কল্পনায় রেখে সে বানিয়েছিল কি না এই ব্যাগটা। প্রশ্ন করা হয়নি ছেলেটাকে।’
ফখরুলের ভাষ্য, জেলে থাকা অনেক নেতাকর্মীর ওপর ভয়াবহ নির্যাতনের ছাপ এখনো স্পষ্ট আছে; তাদের পড়াশোনা, সংসার, ভবিষ্যৎ ভেঙে পড়েছে। তিনি লিখেছেন, ‘আমি জেলে দেখেছি আমাদের ছেলেদের ওপর কী অত্যাচার হয়েছে। সারা শরীরজুড়ে অত্যাচারের দাগ। এদের অনেকের সারা জীবন, ভবিষ্যৎ শেষ হয়ে গেছে জেলে! পড়াশোনা হয়নি, সংসার হয়নি। এদের পরিবার সর্বস্বান্ত হয়ে গেছে। যারা মাঠের রাজনীতি করে না, তারা কোনোদিন জানবে না এদের স্ট্রাগল।’ তথ্যসূত্রভিত্তিক বিচার ও নিপীড়নের প্রতিকার চেয়ে তিনি দাবি করেছেন, ‘প্রতিটি রাজনৈতিক নেতা ও কর্মীর বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের করা প্রতিটি মিথ্যা এবং হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। হাসিনার এবং তার মাফিয়া বাহিনীর প্রতিটি অপরাধের বিচার করতে হবে। আমরা প্রতিশোধে বিশ্বাসী নই। আমরা প্রকৃত অন্যায়কারীর বিরুদ্ধেই মামলা করবো এবং শাস্তি নিশ্চিত করবো। যে যেই অন্যায় করেনি, তাকে সেই অন্যায়ের জন্য হয়রানি কেন করা হবে? কোনো নিরপরাধ মানুষকে হয়রানি করার নাম রাজনীতি না। আমরা ইনসাফের রাজনীতি প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’
ফখরুলের এই পোস্ট রাজনৈতিক মহলে কেন্দ্রভাগেই রয়েছে—একদিকে তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও বিচারপ্রার্থনার আখ্যান তুলে ধরা হচ্ছে, অন্যদিকে এমন বক্তব্যের দাবি-প্রকাশ ও তা সার্বজনীন দাবি হিসেবে গ্রহণের পরিপ্রেক্ষিতে সমালোচনাও তীব্র হচ্ছে। রাজনৈতিক মহল পরিবেশ সৃষ্টি ও প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করছে।








