বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫

যুক্তরাজ্যের ভিসা সংক্রান্ত প্রতারণা বাড়ছে: ভুয়া নথি জমা দিলে ১০ বছরের নিষেধাজ্ঞা

UK Visa

যুক্তরাজ্যের হোম অফিস জানিয়েছে, ভিসা সংক্রান্ত প্রতারণা ক্রমেই বাড়ছে এবং অপরিচিত ফোনকল, ইমেইল বা চিঠির মাধ্যমে মানুষকে টার্গেট করা হচ্ছে। কেউ যদি হোম অফিসের প্রতিনিধি দাবি করে আপনাকে হঠাৎ যোগাযোগ করে থাকে, তবে সেটি প্রতারণা হওয়ার আশঙ্কা অত্যন্ত বেশি। কারণ হোম অফিস কখনোই টাকা বা ব্যক্তিগত তথ্য চাইতে যোগাযোগ করে না। যুক্তরাজ্যের হোম অফিসের এক সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, ভিসার জন্য ভুয়া নথিপত্র জমা দিলে ১০ বছর পর্যন্ত ভিসা নিষেধাজ্ঞার শাস্তি হতে পারে।

কীভাবে প্রতারকরা যোগাযোগ করে? 

হোম অফিস জানায়, অপরাধীরা বিভিন্ন উপায়ে সাধারণ মানুষকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলছে। যেমন—

  • যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে ফোন করে
  • ভুয়া ওয়েবসাইট তৈরি করে কাজ, পড়াশোনা বা ‘গ্যারান্টিযুক্ত ভিসা’-র লোভ দেখিয়ে
  • অফিসিয়াল দেখাতে ইমেইল বা এসএমএস ব্যবহার করে

প্রতারকদের দাবি— তারা সহজে ভিসা করে দিতে পারে বা আপনার ভিসা অ্যাপ্লিকেশনে সমস্যা হয়েছে—এসবই মূলত ফাঁদ।

প্রতারণার কৌশল

প্রতারকরা সাধারণত এমনভাবে কথা বলে যেন তারা সত্যিই সরকারি কর্মকর্তা। তারা—

  • ভুয়া চাকরির অফার লেটার পাঠায়
  • আপনার নাম, ঠিকানা বা অ্যাপ্লিকেশন সম্পর্কিত কিছু তথ্য জানে
  • দ্রুত টাকা পাঠাতে চাপ দেয়
  • ভয় দেখায়- না দিলে ভিসা বাতিল, অ্যাপ্লিকেশন আটকে যাবে, এমনকি deportation-ও হতে পারে বলে

তাদের মূল লক্ষ্য—আপনার কাছ থেকে টাকা বা ব্যক্তিগত তথ্য আদায় করা।

সাম্প্রতিক যেসব প্রতারণা ধরা পড়েছে

১. ভুয়া চাকরির অফার

অনেক ভুয়া ওয়েবসাইট যুক্তরাজ্যে অস্তিত্বহীন চাকরির অফার দেখিয়ে আবেদনকারীর কাছ থেকে ভিসা প্রসেসিং ও অন্যান্য চার্জ চায়।
হোম অফিস পরিষ্কারভাবে বলেছে—
যুক্তরাজ্যে চাকরি পেতে কোনো শর্টকাট নেই, এবং কোনো বৈধ নিয়োগকর্তা কখনো ভিসা ফি নেওয়ার জন্য টাকা চাইবেন না।

২. হোম অফিস বা ভিসা সেন্টারের ভুয়া কর্মকর্তা

অনেকে বাসায় গিয়ে বা ফোনে নিজেদের হোম অফিস অফিসার পরিচয় দিয়ে টাকা দাবি করে। কেউ কেউ শিক্ষার্থীদের টার্গেট করে ভিসায় ‘গুরুতর সমস্যা’ আছে বলে ভয় দেখায়। পরে MoneyGram বা অন্য আন্তর্জাতিক পেমেন্টে টাকা পাঠাতে বলে।
এগুলি সম্পূর্ণ প্রতারণা।

৩. কর্ম ও স্টুডেন্ট ভিসা আবেদনকারীকে টার্গেট

তাদের বলা হয়—যুক্তরাজ্যে থাকার খরচ দেখাতে ‘ডিপোজিট’ দিতে হবে।
কিন্তু হোম অফিস কখনোই এ ধরনের টাকা চায় না।

৪. ভুয়া এজেন্টদের ফাঁদ

এজেন্টরা নিজেদের হোম অফিস বা ভিসা কর্মকর্তার পরিচয় দিয়ে

  • জাল নথি ব্যবহার করে ভিসা করে দিতে পারে
  • টাকার বিনিময়ে ভিসা দ্রুত করে দিতে পারে
    এমন দাবি করে থাকে।
    হোম অফিস জাল নথি শনাক্ত করার উন্নত পদ্ধতি ব্যবহার করে—জাল নথি দিলে ভিসা নিশ্চিত বাতিল হবে।

৫. ভুয়া সরকারি ওয়েবসাইট

অনেক ভুয়া সাইট সরকারিভাবে দেখানোর জন্য ডিজাইন করা হয়। সরকারি ওয়েবসাইট শুধুমাত্র ‘.gov.uk’ দিয়ে শেষ হয়।

৬. ভুয়া ইমেইল ঠিকানা

সরকারি ইমেইল সবসময় হয়-

অনেক প্রতারক বাইরে থেকে অফিসিয়াল মনে হওয়া ঠিকানা দেখালেও ক্লিক করলে তা অন্য ঠিকানায় ইমেইল পাঠায়। হোম অফিস কখনোই ব্যক্তিগত ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠাতে বলে না।

নিজেকে কীভাবে সুরক্ষিত রাখবেন? 

আপনি সতর্ক হবেন যদি-

  • অফারটি অবিশ্বাস্য বা খুব সহজ মনে হয়
  • গ্যারান্টিযুক্ত ভিসার কথা বলা হয়
  • আপনাকে টাকা পাঠাতে বলা হয়
  • ব্যাংক ডিটেইলস, ব্যক্তিগত তথ্য বা পাসপোর্ট তথ্য চাওয়া হয়
  • তাড়াহুড়া বা গোপনীয়তার দাবি করা হয়
  • ওয়েবসাইট খুব নিম্নমানের দেখায়
  • আপনাকে Gmail বা অন্য সস্তা ইমেইলে রিপ্লাই করতে বলে

সন্দেহ হলে কী করবেন?

  • কোনো ব্যক্তিগত তথ্য দেবেন না
  • টাকা পাঠাবেন না
  • ই-ভাউচার বা অজানা অ্যাকাউন্টে অর্থ প্রদান করবেন না

প্রতারণার সন্দেহ হলে রিপোর্ট করুন

যদি আপনি যুক্তরাজ্যে থাকেন, তাহলে Action Fraud–এ রিপোর্ট করতে পারেন, ওয়েবসাইটে অথবা ফোনে 0300 123 2040 নম্বরে। তাদের সংগৃহীত তথ্য National Fraud Intelligence Bureau-তে পাঠানো হয়, যা পুলিশের তদন্তে সহায়তা করে। প্রতারণা প্রতিরোধে বন্ধু-পরিবারকেও সতর্ক করতে ভুলবেন না।

যদি আপনি যুক্তরাজ্যের বাইরে থাকেন, আপনার স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *