অর্থবছর শেষে রেমিট্যান্স দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ

সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে ২ হাজার ৩৯১ কোটি ডলারের সমপরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। যা দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। টাকার অঙ্কে এই রেমিট্যান্সের পরিমাণ দাঁড়ায় ২ লাখ ৭৯ হাজার ৭৪৭ কোটি টাকা (১১৭ টাকা প্রতি ডলার ধরে)। এর আগে, ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছিল। যার পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই তথ্য জানা গেছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আগের অর্থবছরের চেয়ে ২৩০ কোটি বা ১০ দশমিক ৬৪ শতাংশ বেশি রেমিট্যান্স এসেছে। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছিল ২ হাজার ১৬১ কোটি ডলার।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের নগদ প্রণোদনা ও ডলারের দর রেকর্ড পরিমাণ বাড়ার কারণেই মূলত রেমিট্যান্স বেড়েছে। তবে হুন্ডি বন্ধ হলে এই রেমিট্যান্স আরও বাড়ত। এতে রিজার্ভ সংকটও কেটে যেত।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নানামুখী উদ্যোগ, এক্সচেঞ্জ রেটের পরিবর্তন এবং দেশের বাইরে বিভিন্ন ধরনের প্রচার-প্রচারণার কারণেই রেমিট্যান্স বেড়েছে।

এই বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ১০ দশমিক ৬৪ শতাংশ বেশি। মূলত বাংলাদেশ ব্যাংকের নানামুখী তৎপরতার কারণেই রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে। এর পাশাপাশি, বিদেশে ব্যাংকগুলোর বিভিন্ন ধরনের প্রচার-প্রচারণা এবং ডলারের দর বাড়াও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এছাড়া, সরকারের প্রণোদনাও পাচ্ছে প্রবাসীরা। সব মিলিয়ে রেমিট্যান্সে এই উল্লম্ফন হয়েছে। আগামীতে এই ধারা অব্যাহত থাকবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

জানা গেছে, ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। অর্থাৎ কোনো প্রবাসী ১০০ টাকা দেশে পাঠালে তার সঙ্গে আরও ২ টাকা যোগ করে মোট ১০২ টাকা পাচ্ছেন সুবিধাভোগী। এছাড়া ঈদ ও উৎসবে বিভিন্ন ব্যাংক ও মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান সরকারের প্রণোদনার সঙ্গে বাড়তি ১ শতাংশ দেওয়ার অফার দিচ্ছে। এতে বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহী হচ্ছেন প্রবাসীরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে প্রবাসীরা ২৫৪ কোটি ডলার রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন। যা গত ৩৫ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। গত জুন মাসে আসা রেমিটেন্স আগের বছরের জুনের চেয়ে ৩৪ কোটি ডলার বা ১৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ বেশি। গত বছরের পুরো জুন মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ২১৯ কোটি ডলার।

বেড়েছে রিজার্ভ

রেমিট্যান্স বাড়ায় দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ বা রিজার্ভও বেড়েছে। সবশেষ হিসাব অনুযায়ী, গত ২৭ জুন গ্রস হিসাবে বাংলাদেশের রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২৭ দশমিক ১৫ বিলিয়ন (২ হাজার ৭১৫ কোটি) ডলার।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলসহ (আইএমএফ) কয়েকটি সংস্থার পাশাপাশি কোরিয়া থেকে আসা ঋণ যোগ হয় গত ২৬ জুন। এর সঙ্গে রেমিট্যান্সের এই উল্লম্ফন রিজার্ভ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। রিজার্ভ বেড়ে গ্রস হিসাবে অবশ্য আইএমএফ স্বীকৃত বিপিএম৬ পদ্ধতিতে রিজার্ভের পরিমাণ এখন ২২ বিলিয়ন ডলার। এর বাইরে বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভের নিট হিসাবও করে থাকে, যা শুধু আইএমএফসহ বিভিন্ন সংস্থাকে জানিয়ে দেয়। তবে দেশের ভেতরে এই হিসাব প্রকাশ করে না।