বুশরা বিবিকে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছে, অভিযোগ ইমরান খানের

পাকিস্তানের কারাবন্দী সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান দাবি করেছে, তার স্ত্রী বুশরা বিবিকে বিষ দেওয়া হয়েছিলো। মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) আদিয়ালা কারাগারে তোশাখানা দুর্নীতি মামলার শুনানি চলাকালে ইমরান খান বলেন, বুশরার ব্যক্তিগত বাসভবনে বন্দী থাকা অবস্থায় তার খাবারে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছিল। এ ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তেরও আহবান জানিয়েছেন তিনি।

পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খান বিচারক নাসির জাভেদ রানাকে জানান, বুশরার ত্বকে ও জিহ্বায় বিষের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার চিহ্ন রয়েছে। আমি জানি, এর পেছনে কারা রয়েছেন। বুশরা বিবির কোনো ক্ষতি হলে, পাকিস্তানের সেনাপ্রধানকে দায়ী করা উচিৎ, কারণ একটি গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা ইসলামাবাদে তার বানি গালার বাসভবন ও আদিয়ালা কারাগারের সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছিলো।

৪৯ বছরের বুশরা বিবিকে ডাক্তারি পরীক্ষার আর্জি জানিয়ে ইমরান খান আদালতে বলেন, তিনি ও তার দল আগে যে ডাক্তার বুশরার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেছিলেন, তাকে বিশ্বাস করেন না। তিনি ইসলামাবাদের শওকত খানম হাসপাতালের ডা. অসীমের দ্বারা ডাক্তারি পরীক্ষা করার জন্য আদালতের কাছে অনুমতি চান।

সাবেক প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে, আদালত ইমরান খানকে বুশরা বিবির ডাক্তারি পরীক্ষার বিষয়ে বিস্তারিত আবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন।

শুনানি শেষে বুশরা বিবি বলেন, বিষ হিসেবে একটি টয়লেট ক্লিনার লিকুইড ব্যবহার করা হয়েছে। সেই লিকুইডের তিন ফোটা তার খাবারে মিশিয়ে দেওয়া হতো। ফলে এক মাসের মধ্যে তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে।

‘আমার চোখ ফুলে গেছে, আমি আমার বুকে-পেটে ব্যথা ও অস্বস্তি অনুভব করছি। পাশাপাশি খাবার ও পানির স্বাদও তিতা লাগছে। আগে মধুতে কিছু সন্দেহজনক পদার্থ মেশানো হয়েছিল, এখন আমার খাবারে টয়লেট ক্লিনার মেশানো হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, আমার খাবারে কী যোগ করা হয়েছে, সে সম্পর্কে সাব-জেলেরই এক কর্মী আমাকে জানিয়েছিলেন। তবে আমি কোনো নাম প্রকাশ করবো না।

এর আগে পিটিআই দাবি করেছিল যে কারাবাসের সময় বুশরা বিবিকে বিষাক্ত খাবার খাওয়ানো হয়েছিলো। পরে তাকে প্রচন্ড পেট ব্যাথার চিকিৎসা নিতে হয়েছিলো।

গত ৩১ জানুয়ারি ইসলামাবাদের দুর্নীতি বিরোধী বিশেষ আদালত ইমরান খান ও বুশরা বিবিকে তোশাখানা দুর্নীতি মামলায় ১৪ বছরের কারাদণ্ড দেন। কারাদণ্ডের পাশাপাশি তাদের দুজনকে আলাদাভাবে ৭৯ কোটি পাকিস্তানি রুপি জরিমানা ও ১০ বছরের জন্য যেকোনো রাষ্ট্রীয় পদে দায়িত্ব পালনের অযোগ্য ঘোষণা করা হয়।

তাছাড়া বিবাহ বিচ্ছেদের পর শরিয়া আইন মেনে ইদ্দতকাল পালন না করার অভিযোগে করা একটি মামলায় গত ৩ ফেব্রুয়ারি ইমরান ও তার স্ত্রী বুশরা বিবিকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এই দুই মামলার আগে, সাইফার মামলায় ইমরান খান ও তার সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশিকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেন বিশেষ একটি আদালত।

গত বছরের ডিসেম্বরে পাকিস্তানের দুর্নীতি বিরোধী সংস্থা ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টিবিলিটি ব্যুরো (ন্যাব) অভিযোগ তোলে যে, ইমরান খান সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের কাছ থেকে উপহার পাওয়া এক সেট গয়নার দাম কম দেখিয়েছেন। এই অভিযোগে ইমরান খান ও বুশরা বিবির বিরুদ্ধে নতুন একটি মামলা দায়ের করে ন্যাব। পরে চলতি বছরের জানুয়ারিতে ইমরান খান ও তার স্ত্রীকে এই মামলায় অভিযুক্ত করা হয়।

সূত্র: দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন